পেকুয়া প্রতিনিধি :::
পেকুয়ায় মগনামা ইউনিয়নে ফুলতলা ষ্টেশনের আধা কি.মিটারের মধ্যে ফের গুলি ছোঁড়েছে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা। গত শনিবারের সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝিরপাড়া, বহদ্দারপাড়া, খরুলীয়া পাড়ার উত্তেজিত লোকজন আফজলিয়া পাড়ায় ঢুকে পড়ে প্রতিপক্ষকে হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় মাঝিরপাড়া শাহরশিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে ও আফজলিয়া পাড়ার পুর্ব পাশে দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে গুলির বিকট শব্দে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি হয়। ভয়ে মানুষ দিকবিদিক ছুটা ছুটি করে। পেকুয়া থানা পুলিশ দ্রুত ওই স্থানে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্রধারীরা সটকে পড়ে। ঘটনার জের ধরে উত্তর মগনামা ফুলতলা ষ্টেশনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফুলতলা ষ্টেশনে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশ টহল ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পরিস্থিতি প্রশমিত করতে গতকাল রবিবার দুপুরে ফুলতলা ষ্টেশনে প্রশাসন উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগ নেতৃবৃন্দ ও পেকুয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন আ’লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতিকেও উপস্থিত করা হয়েছে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত ( বিকেল ৫টা) শতশত উত্তেজিত লোকজনকে লাঠি সোটা ও লোহার রড নিয়ে ফুলতলা চর্তুপাশে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল আলম, পেকুয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (প্রশাসন) জহির উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার পুলিশসহ ফুলতলা ষ্টেশনে অবস্থান নেয়। দুপুরে আফজলিয়া পাড়ায় বেশ কিছু বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। ছাত্রদলের ক্যাডার আরমান, তার চাচা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি খালেদ মোশারফ, বহু মামলার ফেরারী আসামি দিদারুল ইসলাম, নুর মুহাম্মদের ছেলে আনিস সহ উৎশৃংখল লোকজন প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে এলাকায়। ফুলতলা ষ্টেশনে গত দু’দিন ধরে দোকানপাট সহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ওই ষ্টেশনে লেনদেন বন্ধ থাকবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। দুপুরে সংবাদকর্মীদের বহনকৃত গাড়িতে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। সচিত্র সংবাদ প্রকাশের জন্য পেকুয়ার বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী সকাল থেকে ফুলতলা ষ্টেশনে অবস্থান নেন। দুপুরে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি ও সংবাদকর্মীরা পৃথক গাড়ি নিয়ে ফুলতলা ষ্টেশন থেকে পেকুয়ায় সদরের দিকে যাচ্ছিলেনা। পথিমধ্যে ফুলতলা ষ্টেশনের পুর্ব পাশে মগনামা-বানিয়ারছড়া সড়কের লালমিয়া পাড়া পয়েন্টে সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা চালায় তারা। খালেদ মোশারফ, আরমান, আনিস, দিদার অস্ত্র ও ইট নিয়ে সংবাদকর্মীদের বহনকৃত সিএনজি গাড়িটি সড়কে আটকায়। এ সময় গাড়িতে থাকা পাঁচ সংবাদকর্মীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরন চেষ্টা চালায়। দ্রুত সময়ে ওই স্থানে পুলিশ গিয়ে সাংবাদিকদের অপহরন ও প্রাননাশ থেকে রক্ষা করেছেন। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় সিএনজিতে ছিলেন দৈনিক সাঙ্গু ও দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি মুহাম্মদ হাসেম, দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রাম পেকুয়া প্রতিনিধি ও দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকার পেকুয়া অফিস প্রধান নাজিম উদ্দিন, দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি জালাল উদ্দিন, দৈনিক সংগ্রাম, কর্নফুলি ও ইনানী পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি রিয়াজ উদ্দিন, দৈনিক আমাদের কক্সবাজার পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি শাহ জামাল। এ বিষয়ে সাংবাদিক জালাল উদ্দিন জানায় আমরা সংবাদ তৈরি জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে ফুলতলা ষ্টেশনে যাই। আসার সময় অস্ত্রধারীরা আমাদেরকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরন চেষ্টা চালায়। বিষয়টি আমরা তাৎক্ষনিক প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেছি। এটি আমাদের সাথে সন্ত্রাসীদের বর্বর আচরন। অপরাধীরা অপরাধ করবে অবশ্যই সেটি আমাদেরকে দেশ ও জাতির সার্থে তুলে ধরতে হয়। সেটিতে তারা এ ধরনের হিংস্বাত্বক দেখিয়েছে। মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল এনাম ও সাধারন সম্পাদক রশিদ আহমদ জানায়, যারা ঘটনা সংঘটিত করেছে এরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এ পরিস্থিতির জন্য বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন অংশ জড়িত। আমরা আ’লীগ পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও অনুধাবন করছি। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী বিটু মিয়া জানায়, খালেদ, আরমান, দিদার এরা সবাই বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমি মনে করি তারা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করছে। আমরা গিয়েছি উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানায়,পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে। দু’পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত প্রদক্ষেপ নিবে পুলিশ। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম জানায়, ওয়াপদার একটি স্লুইচ গেইটের নিয়ন্ত্রন ও পানির ট্যাক্স নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বাবুল চৌধুরী ও মৎস্য চাষীদের বিরোধ প্রশমিত করার কথা ছিল আমার মাধ্যমে। কিন্তু এর আগে বাবুল চৌধুরী, খালেদ মোশারাফ, দিদারুল ইসলাম, বাইশ্যা এ জঘন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসীরা জানান, ব্যাঙখোয়াল ঘোনায় পানির উৎস থেকে মৎস্য চাষিদের কাছ থেকে চাঁদা বাজি চলছিল। খালেদ ও বাবুল চৌধুরী চাষিদের জিম্মি করে প্রবাহমান খালের পানি থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করছিলেন। এনিয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মুলত। এখন গ্রামবাসির মধ্যে ছড়িে পড়েছে সংঘাত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল আলম জানায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনা হয়েছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গের সমন্বয়ে উভয় পক্ষের প্রতিনিধি ডাকা হয়েছে। এর পরেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশের পাশা পাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে ষ্টেশনে।
পাঠকের মতামত: